অভিযাত্রী কর্তৃক নির্বাচিত "শহিদী গল্প"

অভিযাত্রী কর্তৃক নির্বাচিত 

" শহিদী গল্প

আমাদের সালাফদের মধ্য হতে আবু হুদামাহ (রা.) একজন বড় মুজাহিদ ছিলেন। তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে জিহাদের ময়দানে। বিশেষ করে, রোমানদের  বিরুদ্ধে তিনি অনেক যুদ্ধ করেছেন।

আবু হুদামাহ (রাঃ) একবার মসজিদে নববীতে বসে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলেন। তখন তার বন্ধুরা বলল,"তুমিতো সারাটা জীবন জিহাদের ময়দানে কাটিয়েছো। আজকে তুমি আমাদের জিহাদের ময়দানে এমন একটি ঘটনা শোনাও যে ঘটনাটি তোমাকে সবচাইতে বেশি আশ্চর্যান্বিত করেছে।"

আবু হুদামাহ ( রাঃ) বললেন,
আচ্ছা শোনো "আমরা একবার রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত দিকা নামক স্থানের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম।পথিমধ্যে আমি একটি উট কেনার জন্য এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলাম। আমাদের অবস্থানের কথা শুনে একজন মহিলা আসলো এবং আমার সাথে দেখা করলো এবং বললো, "আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছেলে ছিল তারাও শহীদ হয়েছে। আমার কয়েকজন ভাই ছিল তারাও জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছেন। এখন শুধুমাত্র আমার একটি ছেলে আছে , আর ছোট্ট একটি মেয়ে আছে। আমার ছেলেটির বয়স ১৫ বছর সে হাফেজে কোরআন এবং হাদীসের ব্যাপারে ভালো জ্ঞান রাখে এবং সে একজন অশ্বারোহী। দেখতেও খুব সুন্দর। আমার খুব ইচ্ছে ছেলেটিকে জিহাদে পাঠাবো। কিন্তু সে একটি কাজে শহরের বাহিরে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি। অপেক্ষায় আছি সে আসলেই আপনার সাথে জিহাদে পাঠিয়ে দিতাম। আর এখন আপনাকে দেওয়ার মত আমার ঘরে কিছুই নেই। আফসোস! এমন মহান একটি জিহাদ হচ্ছে আর আমি এটা থেকে বঞ্চিত থাকবো এটা তো কিছুতেই হতে পারে না। তখন তিনি ধুলোমাখা কয়েকটি চুল দিয়ে বললেন এই চুল গুলোকে ঘোড়ার লাগাম হিসেবে ব্যবহার করবেন যাতে এই বরকতময় জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে আমি কিছুতেই বঞ্চিত না হই।"

আবু হুদামাহ (রাঃ) বললেন, "আমি চুলগুলো নিলাম এবং তার ছেলেকে দেখার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তার আসতে দেরী হচ্ছে দেখে আমরা গন্তব্যের দিকে রওনা হয়ে গেলাম। অনেক পথ অতিক্রম করার পর দেখতে পেলাম, পেছন দিক থেকে একজন অশ্বারোহী ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে আমাদের কাছে। আসার পর সেই অশ্বারোহী যুবক আমাকে চাচা বলে ডাক দিল এবং পরিচয় দিয়ে বলল,

"আমি ঐ মহিলার সন্তান যিনি আপনাকে জিহাদের জন্য চুল দান করেছেন। আমি আপনার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চলে এসেছি।"

আবু হুদামাহ (রাঃ) বললেন,

"আমি লক্ষ্য করলাম যে ছেলেটি একেবারেই ছোট ১৪/১৫ বছর বয়স হবে মাত্র। আর যেহেতু, তার উপর জিহাদ আবশ্যক নয় তাই আমি তাকে বল্লাম বাবা তুমি বাড়িতে ফিরে যাও। তোমার মায়ের তো কেউ নেই, তুমি বাড়িতে গিয়ে তোমার মায়ের পাশে থাকো, মায়ের খেদমত করো, মায়ের দেখাশোনা করো তুমি আপাতত ফিরে যাও,পরে বড় হয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে।"

তখন সে বলল," চাচা আমার মা আমাকে শেষ বিদায় দিয়েছেন। তিনি আমাকে আপনার সাথে জিহাদে যেতে বলেছেন আর আমি ভালো ঘোড় ছাওয়ারী এবং দক্ষ তীরন্দাজ। আপনি আমাকে সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পাবেন। কখনো যুদ্ধ থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শনকারী হিসেবে পাবেন না। আপনি আমাকে সাথে নিয়ে নিন।"

অনেক কাকুতি মিনতি করার পর আমি তাকে সাথে নিয়ে নিলাম। আমরা কিছু পথ অতিক্রম করে এক জায়গায় তাবু গাড়লাম এবং যাত্রা বিরতি দিলাম। কারণ ঐ দিন আমরা সবাই রোজা রেখেছিলাম। আর সফর করে সবাই ক্লান্ত। বিকেল বেলা খাবার রান্না করতে হবে।

ছেলেটি বলল,"চাচা আপনারা সবাই রোজা রেখেছেন আপনারা তো ক্লান্ত তাই দিন আপনাদের কাজটা আমি করে দিচ্ছি।"

সে জোর করে বললো, তাই রান্নার দায়িত্বটা তাকেই দেওয়া হলো। ক্লান্ত মুজাহিদীনরা ঘুমিয়ে পড়লেন রান্না করে একপর্যায়ে সে ও ঘুমিয়ে পরলো।

আবু হুদামাহ রাঃ বললেন,

"আমি ঘুমন্ত অসহায় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে ঘুমের মধ্যে মিটমিট করে হাসছে। আমি অন্যান্য মুজাহিদকেও বিষয়টি দেখালাম। ছেলেটির ঘুম ভাঙার পর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি হাসছিলে কেন?"

সে বলতে চাইলো না অনেক জোরাজুরি করার পর সে বলল, "আমি দেখলাম স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা নির্মিত বিশাল একটি প্রাসাদ। প্রাসাদটি দেখতে খুবই মনোরম ছিল। অনেকগুলো সুন্দর মেয়ে এই প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আমাকে অভিবাদন জানাতে লাগলো। আমাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। তাদের মধ্য থেকে একটি মেয়ে আমাকে ডাক দিয়ে বলল," হে মারজিয়ার স্বামী,  মারজিয়া উপরে আছে।"

আমি প্রাসাদের উপরে চলে গেলাম। ওপরে গিয়ে দেখি খুব সুন্দরী একটি মেয়ে বসে আছে।
যার উজ্জলতা সূর্যের আলোকে ও হার মানায়। আমি তাকে স্পর্শ করার জন্য তাড়াহুড়া করছিলাম।  তখন সে আমাকে বললো," ধৈর্য ধরো এখনো সময় হয়নি। আগামীকাল দুপুরে তুমি আমার সাথে সাক্ষাত করবে।" এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেল।

আবু হুদামাহ রাঃ বললেন,

"পরদিন রোমানদের বিরুদ্ধে আমরা তুমুল যুদ্ধ শুরু করলাম। এক পর্যায়ে আমরা বিজয় লাভ করলাম। রোমানরা পরাজিত হল। যুদ্ধ শেষে দেখা গেল আমাদের অনেক সাথী ময়দানে পড়ে আছে। সাথীরা তাদেরকে তুলছে। আমিও আহত সাথীদের মাঝে মনে মনে ঐ ছেলেটিকে তালাশ করতে লাগলাম।"

হঠাৎ দেখতে পেলাম সেই ছেলেটি রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছে। আমি দৌড়ে সেই ছেলেটির কাছে গেলাম ও আমাকে লক্ষ্য করে বললো, "চাচা আমার এই রক্তমাখা জামাটা আমার মাকে নিয়ে দিবেন। আর বলবেন আপনার ছেলে আপনার ওয়াদা পূর্ণ করেছে। সে লড়াই করতে করতে বিজয় এনেছে। সে পিছু হটেনি।
এতে করে আমার মা সান্তনা পাবে। আর বাড়িতে আমার ছোট্ট একটি বোন আছে। বাড়িতে তো কেউ ছিলনা তাই ও আমার কাছেই থাকত। আমি ওকে অনেক আদর করতাম ও আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতো না। সব সময় "ভাইয়া" "ভাইয়া" বলে ডাকতো।"

আপনি যখন বাড়িতে যাবেন তখন আমার ছোট্ট বোনটাকে একটু সান্তনা দিবেন আর আমার মাকে শান্তনা দিয়ে বলবেন," আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে, আপনি সৌভাগ্যবান।"

"চাচা আমি আপনার স্বপ্নে দেখা  মার্জিয়ার কথা বলেছিলাম। মার্জিয়া আমার মাথার পাশে বসে আছে। সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে"এই বলে ছেলেটি শহীদ হয়ে গেলো।

আবু হুদামাহ রাঃ বললেন,

"পরবর্তীতে আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন সেই ছেলেটির বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজায় ওর ছোট বোনটি দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ দেখতে পেলাম সেই ছেলেটি রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছে।
আমি দৌড়ে সেই ছেলেটির কাছে গেলাম ।
ও আমাকে লক্ষ্য করে বলল চাচা আমার এই রক্তমাখা জামাটা আমার মাকে নিয়ে দিবেন। আর বলবেন আপনার ছেলে আপনার ওয়াদা পূর্ণ করেছে। সে লড়াই করতে করতে বিজয় এনেছে। সে পিছু হটেনি।
এতে করে আমার মা সান্তনা পাবে। আর বাড়িতে আমার ছোট্ট একটি বোন আছে। বাড়িতে তো কেউ ছিলনা তাই ও আমার কাছেই থাকত। আমি ওকে অনেক আদর করতাম ও আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিত না। সব সময় ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকত। আপনি যখন বাড়িতে যাবেন তখন আমার ছোট্ট বোনটাকে একটু সান্তনা দিবেন আর আমার মাকে শান্তনা দিয়ে বলবেন আমি শহীদ হয়েছি আপনি সৌভাগ্যবান। চাচা আমি আপনার স্বপ্নে দেখা মার্জিয়ার কথা বলেছিলাম মার্জিয়া আমার মাথার পাশে বসে আছে। সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে এই বলে ছেলেটি শহীদ হয়ে গেল। আবু হুদামাহ রাঃ বললেন পরবর্তীতে আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন সেই ছেলেটির বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজায় ওর ছোট বোনটি দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে বললাম তোমার মাকে ডাকো ছেলেটির মা আসলো এবং আমাকে বলল আপনি কি আমাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন না সুসংবাদ দিতে এসেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম সান্ত্বনা কোনটা আর সংবাদ কোনটা। সে বলল আমার ছেলে যদি সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে তাহলে আমাকে সান্ত্বনা দিন আর আমার ছেলে যদি শহীদ হয়ে থাকে তাহলে এটা হবে আমার জন্য সুসংবাদ। আবু হুদামাহ রাঃ বললেন আলহামদুলিল্লাহ আপনার ছেলে বীরত্বের সাথে লড়াই করতে করতে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন সে পিছু হটেনি তখন ওই মহিলা বললেন সমস্ত প্রশংসা সেই সত্তার যিনি আমার এই ছেলে কে পরকালের নাজাতের উসিলা বানালেন।



কলমেঃ তৈয়ব্যুর রহমান। 
অভিযাত্রী নবরুপে সোনালি দিনের.... 



Comments